সুন্দরবনের ইতিহাস

বনবিবির নামের মধ্যেই রয়েছে তার পরিচয়।তিনি বনের রানি।বনের একমাত্র অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে বনবাসী মানুষের কাছে পূজিত হয়।বনের বাইরে তার কোনও খাতির নেই।গভীর বনে বিপদাপন্ন মানুষ যখন অসহায় তখন তিনি তাদের বাঁচার সহায়।তিনি বিপদতারিনি তিনি বরাভয়।
একটি বিশাল ভূখণ্ডে বহু জায়াগায় ঘন বন থাকতে পারে।কিন্তু বনবিবি জল-জঙ্গলে ঘেরা সোদরবনের রানি,যে এলাকায় জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ বলে প্রবাদ নিয়ে মানুষের আতঙ্করের স্থনাঙ্কে অবস্থান করে।কখন কখন বাঘের চেয়ে বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে অন্য এক জমদুত –যারা হালুমের চেয়ে বেশি হার হিম করা হারে রে রে রে করে ডাক ছেড়ে এগিয়ে আসে।মানুষের চোখে এরা জলদস্যু বা ডাকাত।
সুন্দরবনে বনবিবির থানে ঠিক কবে থেকে পুজা শুরু হয়েছে তা সঠিক বলা সম্ভব নয়।তবে সুন্দরবনের আধিবাসি লোকসমাজ ১০০-৩০০ বছর আগে বন এলাকায় বসত শুরু করে কৃষিকাজকে রুজি করার উদ্দেশ্যে তারা কয়েকটি দ্বীপের বনবাদার কেটে সাফ করে দেয়।পরে অবশ্য নির্বিচারে বন-ধ্বংস ঠেকাতে আইন জারী করা হয়।
বঙ্গোপসাগরের কাছে শিরা-উপশিরার মত নদী,খারি ও বনে ঘেরা।এই অঞ্চলকে প্রকৃতি সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে।প্রকৃতির উজার করা দানপত্র নিয়ে এই এলাকা ছাসের জমির থেকেও বেশি উর্বর।ফলে আধিবাসীদের রুজির উপকরন হয়ে ওঠে জঙ্গলের কাঠ,গাছের চাক ভাঙ্গা মধু,এবং নদী খাড়ির মীন সংগ্রহ।
এই সব উপকরন সংগ্রহয়ে বনবাসিদের গভীর জঙ্গলের ভিতরে এতটাই যেতে হয় যে যেখানে গাছের পাতার ফাক দিয়ে সূর্যের আলো মাটিতে পরে না বললেই চলে।এই আল-আধারি পরিবেশে বাঘের পেতে যাওয়া ফেরার পথে ডাকাতের পেটে যাওয়ার সর্বস্বান্ত হাওয়ার ষোল আনা আসঙ্খা থাকে।

এছাড়া বনবিবিকে তারা তাদের একমাত্র ভগবান হিসেবে মানে।তাদের বিপদে আপদে যে বনবিবি রক্ষা করবে বলে তাদের বিশ্বাস।অর্থাৎ তার মধু সংগ্রহ বা কাঠ কাটতে গেলে যাতে কোনও বিপদ না আসে তার জন্য এই বনবিবির পুজ তারা করেন।

Comments