বনবিবির ইতিহাস



বসবাসের এলাকাকে বাংলা ভাষায় মহল বলে,যা সুন্দরবনের কথ্য ভাষায় মাল।এই মালের সর্বত্র বনবিবির বন্দনা করা হয়।জঙ্গলের ভিতরে বা পাশে গাছের নীচে থান বসিয়ে রানির প্রতিষ্ঠা করা হয়।এরপর বনবাসিরা ভক্তি সহকারে দেবীর পুজা করেন।দেবীর কাছে তারা মানত করে গভীর জঙ্গলে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে এমন কাজ যেন তারা উৎরে যেতে পারে।কোনও বিপদ যেন তাদের স্পর্শ না করতে পারে।নদীর পারে পুজার বন্দোবস্ত করার নিয়ম থাকলেও অনেক সময় খালপারেও পুজোর আয়োজন করা হয়।
সুন্দরবনের বাসন্তী,গোসাবা,সাহেবপুর,রামচান্দ্রাখালি,সন্দেশখালি এলাকায় হেঁতাল-গরান গাছের তলায় বনবিবির পুজো করা হয়।পুজোর অন্যতম লোকাচার হল ‘হাজত’দেওয়া।বনের ভিতর একটি বড় মাপের তাল বানিয়ে তার উপর সাতটি গম্বুজ তৈরি হরা হয়।এরপর দেওয়া হয় দুধ কলা ভেদা তাকে হাজত বলা হয়।মাঝে মাঝে পুজোর উপাচার হিসেবে দেওয়া হয় ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো বনমোরগ।পূজোর অন্যান্য উপকরনের মধ্যে থাকে লাল ও সাদা আবির,পাচ ধরনের শস্য,ধুপ ধুন ফুল ও মালা,বরন ডালা,চাল,ফল,মিষ্টি ও মধু গরান গাছের পাতা ইত্যাদি।ব্রতকথার মত গান করে পরা হয় বনবিবির জহুরনামা,জাকে পাঁচালি বলা যেতে পারে।পাঁচালি পরার পর পুজো শেষ হয়।এরপর কখন কখন যাত্রা গান পরিবেশন করা হয়।
জহুরনামা হল বনবিবি ও তার শিষ্য দুঃখকে নিয়ে চালু প্রবাদগাঁথা।জীবিকার প্রয়োজনে বনবিবির পূজোর আয়োজন করা হয়।জেলে,কাঠুরে এবং মৌলরা অর্থাৎ যারা মধু সংগ্রহ করে তারা এই পুজোর ব্যবস্থা করে।সাধারণত দুটি দিন পৌষ-সংক্রান্তি ও মাঘি-পূর্ণিমার দিন বনবিবির পুজ শুরু হয়।শুক্রবার বনের ভিতর ঢুকতে মানা।কারণ ওইদিন দেবী বনে থাকেন না চলে যান মক্কা-মদিনায়।

ফাল্গুন চৈত্র ও বৈশাখ মাসে কাঠুরে ও মৌলরা তাদের পেতের তান্রে বনের ভিত্র ঢোকে।গভীর জঙ্গলের যাওয়ার এবং ফেরার পর বনবিবির পুজো করা হয়।বাঘের পিঠে বনবিবির আসন পাতা থাকে।তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে যমজ ভাই শাহ-জঙ্গলি,দেবীর কোলে থাকে দুখে।এছাড়া সঙ্গী হল অনুগামী শিস্য হল বরকানগাজি।আর এক অনুগামী হল দক্ষিন রায় ও দেবীর সঙ্গী হিসেবে থাকে।হিন্দু,ব্রাহ্মণ অব্রাহ্মণ মুসলিম খ্রিস্রান সহ সব জাতপাতের মানুষ দেবীর পুজো করেন।বনবিবির পুজো সর্বধর্ম সম্মেলনের এক উদাহরণ।

Comments

Post a Comment